আবার বিতর্কের কেন্দ্রে কোহিনুর
উ.নি.ডে; ফার্সিতে কোহ-ই-নূর বাংলায় যার অর্থ আলোর পাহাড়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় হীরাও নয়, সবচেয়ে সুন্দরও নয়, তবুও ইতিহাসে বারবার ক্ষমতা আর বিতর্কের অংশ হয়েছে এই হীরাটি। বর্তমান সময়ে কোহিনূর আরও একবার ফিরে এসেছে বিতর্কের কেন্দ্রে। হীরার চারপাশের অস্বস্তি এখন প্রথম পাতার খবরে পরিণত হয়েছে।
ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি দল রানী ক্যামিলা-র কনসোর্টের রাজ্যাভিষেকের সময় কোহ-ই-নূর পরার যে কোনো পরিকল্পনা "ঔপনিবেশিক অতীতের বেদনাদায়ক স্মৃতি" ফিরিয়ে আনবে বলে মন্তব্য করেছে। স্পষ্টতই ভারতের সঙ্গে অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে ইংল্যান্ডের ওপর এটি চাপ সৃষ্টি করবে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে কোহিনূর মুঘল, ফার্সি, আফগান এবং শিখদের হাত ফেরি হয়ে ইংরেজদের হাতে গিয়েছে। ১৮৪৯ সালে ব্রিটেন, দশ বছর বয়সী লাহোরের বালক-রাজা মহারাজা দুলীপ সিং-র কাছ থেকে এই কোহিনূর ছিনিয়ে নেয়। তারপর সেটি মারাত্মক রকমের হেরফের করে কাটিং করে ওজনে প্রায় অর্ধেক করা হয়। রানী ভিক্টোরিয়া এটি পরতেন। শেষমেষ ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত রাজা ষষ্ঠ জর্জের সহধর্মিণী তাঁর তাজে এটি পরেছেন।
১৯৪৭ সালে সদ্য স্বাধীন ভারতের সরকার হীরাটি ফেরত চেয়েছিল। ১৯৭৬ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী, জুলফিকার আলী ভুট্টো হীরাটি ফেরত চেয়ে ইংল্যান্ডকে গরম করেছিলেন। জ্বালাময়ী চিঠি লিখে তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন যে, এটি লাহোরের ঐতিহ্যের অংশ ছিল। পাকিস্তানকে কোহিনূরের ফেরত দেওয়া হবে "একটি নতুন আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচারের প্রতীক যা পুরানো যুগের দখলদার, কুক্ষিগত মেজাজের থেকে আকর্ষণীয়ভাবে ভিন্নতাকে প্রদর্শন করবে"। এই ধরনের আরও অন্যান্য অনুরোধসমূহ ব্রিটেনের পক্ষে সবসময় কঠোরভাবে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। উত্তর দেয়া হয়েছে, কোহিনূরের ইতিহাস এত জটিল যে, ব্রিটেনের পক্ষে জানা সম্ভব নয়, এর প্রকৃত দাবিদার কোন দেশ? তবে বর্তমান এই পরিস্থিতিতে বাকিংহাম প্রাসাদের আধিকারিকরা আগামী ৬ই মে, ২০২৩-এ ওয়েস্টমিনিস্টার অ্যাবেতে যখন তিনি এবং তার স্বামী রাজা তৃতীয় চার্লস রাজ্যাভিষেক করবেন তখন রানী ক্যামিলার মূল্যবান হীরা পরা উচিত কিনা তা পর্যালোচনা করছেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন